হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করিয়া সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে যাহা ঘটিয়া গেল তাহা দুর্ভাগ্যজনক শুধু নহে, অগ্রহণযোগ্যও বটে। অনভিপ্রেত সেই সংঘাত-সংঘর্ষের অভিঘাত যে সহসা প্রশমিত হইবার নহে তাহা সহজেই অনুমেয়। পাশাপাশি ইহাও তাত্পর্যপূর্ণ যে, ঐতিহ্যগতভাবে নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সঙ্গত কারণেই এখানকার আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত জাতীয় রাজনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে—ইহাই স্বাভাবিক। আর তাহার দায় অনিবার্যভাবে আসিয়া পড়ে দল ও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিটির উপর—যিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করিয়া চলিয়াছেন। নারায়ণগঞ্জের বিবদমান প্রভাবশালী দুই জনপ্রতিনিধি তাহা ভালো করিয়া জানেন বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। সর্বোপরি, উভয়েই নারায়ণগঞ্জের এমন দুইটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের উত্তরসূরি—বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যাহাদের অবদান এককথায় অপরিসীম। ফলে উভয়ের নিকট হইতে যে ধরনের দায়িত্বশীলতা ও সহিষ্ণুতা প্রত্যাশিত ছিল—দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাহারা তাহা পূরণে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছেন।
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি লইয়া যত কথাই বলা হউক—এই ক্ষেত্রে মূল বিরোধটা ছিল হকারকেন্দ্রিক। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) ফুটপাত হইতে হকার উচ্ছেদের উদ্যোগ লইয়াছিল। সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বরও উচ্ছেদ অভিযান চলে। ইহাতে ক্ষতিগ্রস্ত হকারদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকিলেও নাসিক তাহাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। তাহাদের যুক্তি ছিল, ফুটপাত নাগরিকদের হাঁটাচলার জন্য—হকারদের জন্য নহে। ইহা নিঃসন্দেহে আইনসম্মত কথা। তবে মনে রাখিতে হইবে যে, আইনে অনেক কথাই বলা থাকে। জনসম্পৃক্ত রাজনীতিকমাত্রই জানেন যে, তাহা প্রয়োগের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, অবস্থান ও বাস্তবতা প্রভৃতিও বিবেচনায় রাখিতে হয় গুরুত্বসহকারে। ফুটপাতগুলি হকারমুক্ত হউক তাহা কে না চায়! পাশাপাশি এই বাস্তবতাও তো অস্বীকার করা যাইবে না যে, জনবহুল এই দেশের হাজার হাজার পরিবার এখনো এই ফুটপাতকে অবলম্বন করিয়া স্বউদ্যোগে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করিয়া থাকে। বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকিলে হয়ত তাহারা আইনবহির্ভূতভাবে ফুটপাতে পসরা সাজাইয়া বসিত না। ফুটপাত খালি করিবার আগে এইসকল মানবিক দিকও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনায় রাখা আবশ্যক। অনমনীয়তা কিংবা আপসহীনতা শব্দগুলি যত শ্রুতিমধুরই হউক না কেন—রাজনীতিতে তাহা সবসময় চলে না।
আমরা জানি, হকার উচ্ছেদের পাশাপাশি তাহাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও নাসিক মেয়রের বিবেচনায় ছিল। তিনি তাহার পরিকল্পনার কথা জনসমক্ষে তুলিয়াও ধরিয়াছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসাবে অপরপক্ষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাইয়াছেন তাহাও সমর্থনযোগ্য নহে। হকার উচ্ছেদ কিংবা পুনর্বাসন বিষয়ে তাহার যদি ভিন্ন কোনো প্রস্তাব বা পরিকল্পনা থাকে তাহা উভয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেও মীমাংসা করিতে পারিতেন। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, আমরা কাহারও পক্ষে বা বিপক্ষে নহি। আমাদের বক্তব্য হইল, তাহারা উভয়েই অভিজ্ঞ রাজনীতিক এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত। সঙ্গতকারণেই এমন কিছু তাহাদের করা উচিত নহে যাহাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং সর্বোপরি ক্ষুণ্ন হয় তাহাদের দল ও সরকারের ভাবমূর্তি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply